https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গোমেধ কি?

Friday, September 22, 2017


অথর্ববেদ কান্ড ১১ সুক্ত ২ এর ১১ মন্ত্রে পাঁচ পশুর গণনা করা হয়েছে - 

চতুর্নমো অষ্টকৃত্বো ভবায় দশ কৃত্বঃ পশুপতে নমস্তে।
তবেমে পঞ্চ পশাবো বিভক্তা গাবো অশ্বাঃ পুরুষা অজাবয়ঃ।।

সুখউৎপাদক পরমেশ্বর কে চার বার, আট বার নমস্কার,  হে দৃষ্টিসম্পন্ন জীবের রক্ষক! তোমাকে দশ বার নমস্কার। তোমারই বিভক্ত এই পাঁচ দৃষ্টিসম্পন্ন [জীব] গাভী, ঘোড়া, পুরুষ, ছাগল এবং ভেড়া। 

এই মন্ত্রের শেষ ভাগে পশুর ৫ বিভাগ করা হয়েছে।  গাভী, ঘোড়া, পুরুষ, ছাগল এবং ভেড়া।  আমার পৌরাণিক ভাইয়েরা এই পশুদের আধারের উপর হিংসাময় পাঁচ মেধ অর্থাৎ যজ্ঞের কল্পনা করে। যথাঃ গোমেধ, অশ্বমেধ, পুরুষমেধ বা নরমেধ, অজমেধ এবং অবিমেধ

গোমেধের পৌরাণিক অর্থঃ

পৌরাণিক বিদ্বান প্রায়ঃ গোমেধের অর্থ করে যে, "গোযজ্ঞ" যাহাতে গাভীকে কেটে অগ্নিতে তার অঙ্গকে আহুতি দেওয়া হয়।

ইহার সমীক্ষাঃ

বৈদিক কোষ নিঘন্টু তে গাভীর নাম নিম্নলিখিত মেলে। যথাঃ -

অঘ্না,উস্ত্রা, উস্ত্রিয়া, অহী,মহী, অদিতিঃ, ইলা, জগতী, শকরী।। নিঘঃ ২।১১।।

এই নামের মধ্যে "অঘ্না"  এবং অদিতী " এই দুটি  শব্দের উপর কিছু বিচার করা আবশ্যক।

(ক) অঘ্না - অঘ্না শব্দের অর্থ যাস্কমুনি নিম্নলিখিত শব্দে করেছেন। যথাঃ -

"অঘ্না অহন্তব্যা ভবতি"।।  নিরু. ১১,৪৩।।

গাভীর নাম অঘ্না এইজন্য যে, তাহা "অহন্তব্যা" অর্থাৎ হত্যা করার যোগ্য নয়।

নিরুক্তের টীকাকার শ্রীমদ্ দূর্গাচার্য জী নিরুক্তাকারের এই নির্বচনের টীকা নিম্নলিখিত শব্দে করেছেন। যথাঃ -
"অঘ্না কস্মাত্?। সা হি সর্বস্যৈব অহন্তব্যা ভবতি"।
ইহার অভিপ্রায় এই যে, গাভী কে অঘ্না এই জন্য বলা হয়েছে তাহা সর্বদা "অহন্তব্যা" অর্থাৎ হত্যার যোগ্য নয়।
নিরুক্ত ৩।৯ এর টীকাই দূর্গাচার্য "অঘ্না" পদের ব্যাখ্যায় "অঘ্না অহন্তব্যা ভবতি" এইা লিখেছেন।  এই প্রকার নিঘন্টু তে অঘ্না পদের ব্যাখ্যায়,  নিঘন্টুর ভাষ্যকার শ্রী দেবরাজ যজ্বা "অঘ্না অহন্তব্যা" লিখেছেন।
ইহাতে স্পষ্ট প্রতীত হয় যে নিঘন্টু নিরুক্ত,  দুর্গাচার্য তথা দেবরাজ যজ্বা অঘ্না পদের উপর গাভীর হত্যা সর্বদা নিষেধ করেছেন।

বৈদিক মন্ত্রে স্থানে স্থানে গাভীর জন্য অঘ্না পদের উল্লেখ রয়েছে। বৈদিক নাম যৌগিক।  বেদে গাভীর জন্য "অঘ্না" পদ এইজন্য রাখা হয়েছে যে, বেদের স্বাধ্যায় কারীর "অঘ্না" এই নাম দ্বারা জ্ঞান হয় যে, বেদে গাভীর হত্যা সর্বদা নিষেৎ।  মহাভারত শান্তপর্ব ২৬৪  অধ্যায়ের ৪৭ অধ্যায়ে অঘ্না শব্দের সমন্ধ্যে বলা হয়েছে -

অঘ্না ইতি গবাং ক এতো হন্তমুর্হতি।
মহচ্চকারাকুশলং বৃষং গাং বাহহলভেন তু য়ঃ।।

অর্থাৎ শ্রুতিতে গাভীকে অঘ্না (অবধ্য) বলা হয়েছে। পুনারায় তাকে হত্যার জন্য কে বিচার করেন? যে গাভী কে এবং ষাড়কে মারেন তিনি মহা পাপ করেন।

এই প্রকার অঘ্না পদ দ্বারা ইহা প্রতীত হয় হয় যে, গাভীর হত্যা করা উচিৎ নয়। এখন গাভীর দ্বিতীয় নাম "অহি" এর উপর বিচার করা উচিৎ।

(খ) অদিতিঃ অদিতি শব্দের নির্বাচনে নিঘন্টুর টীকায় শ্রীদেবরাজ যজ্বা লিখেছে " ন দ্যতি, অখন্ডীয়া বা"।  ইহার অভিপ্রায় এই যে, গাভীর নাম অদিতি এইজন্য হয়েছে তাহা অখন্ডনীয়, অর্থাৎ তাহার অঙ্গ কে খন্ড খন্ড টুকরো করা উচিৎ নয়।  অদিতি শব্দে অ এবং দিতি এই দুই ভাগ,  দিতি  এর অর্থ হচ্ছে কাটা। এর সাথে অ যুক্ত হয়ে অর্থ হয় তাহাকে কাটা না যায় বা কাটার যোগ্য নয়।

এই প্রকার গাভীর এর দুই নামের উপর বিচার করার দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, গাভীর যজ্ঞে হত্যা, বৈদিক ভাবের সর্বদা বিপরীত।  যদি বেদ যজ্ঞে গাভীর বধ অভীষ্ট হতো বেদে গাভীর নাম ওইরুপ হতো না যাহার ভাব এই যে,  গাভীর হত্যা করা উচিৎ নয়।

পাঠকদের বিচারের এখন অথর্বেদের গোসুক্ত (৪।২১) পুরোটার উল্লেখ করা হলো ।  যাতে স্পষ্ট হবে যে গোমেধের পৌরাণিক ভাব সর্বদা অসত্য।

আ গাবো অগ্মন্নুত ভদ্রমক্রনৎসীদন্তু গোষ্ঠে রণয়ন্ত্বস্মে।
প্রজাবতীঃ পুরুরূপা ইহ স্যুরিন্দ্রায় পূর্বীরূষসো দুহানাঃ।। ১।।

সরলার্থঃ গাভী  আমাদের লক্ষ্য করে আসে  এবং আমাদের কল্যাণ করে,   গোশালায়  অবস্থান করে এবং এই গাভী আমাদের ক্ষীর আদি প্রদান করে আনন্দিত করে। উত্তম বাছুড়বতী  শ্বেত, কৃষ্ণ, অরুণ আদি অনেক বর্ণবিশিষ্ঠ গাভী আমাদের ঘরে সমৃদ্ধ হোক,  এই গাভী বহু উষাকাল পর্যন্ত সেই প্রভূর হবির জন্য দুগ্ধের দোহন [প্রপূরণ] কারী হোক।।১।।

ইন্দ্রো যজ্বনে গৃণতে শিক্ষত উপেদ্দদাতি স্বং মুষায়তি।
ভূয়োভূয়ো রয়িমিদস্য বর্ধয়ন্নভিন্নে খিল্যে নি দধাতি দেবয়ুম্।।২।।

সরলার্থঃ যজ্ঞশীল পুরুষের জন্য  এবং  স্তবন কারী মনুষ্যের জন্য প্রভূ শিক্ষা দান করেন,  প্রভূ  নিশ্চয়রূপে এই যজনশলীল স্তোতার জন্য এই গাভীকে সমীপতা দ্বারা প্রাপ্ত করায় এবং এই যজনশীলের ধন অপহরন করেন না।  প্রভূ  অধিক থেকে অধিক এই স্তোতার ধন কে নিশ্চয়ই বৃদ্ধি করে এই দিব্যগুণের কামনাকারী পুরুষ কে  দুঃখ থেকে বাসনা থেকে অহন [অনাক্রান্ত] স্বর্গলোকে স্থাপিত করেন।।২।।

ন তা নশন্তি ন দভাতি তস্করো নাসামামিত্রো ব্যথিরা দধর্ষতি।
দেবাংশ্চ যাভির্যজতে দদাতি চ জ্যোগিত্তাভিঃ সচতে গোপতিঃ সহ।।৩।।

সরলার্থঃ প্রভূ কর্তৃক প্রদত্ত গাভী  নষ্ট না হোক চোর  ইহাকে হিংসিত না করুক  এই গাভীর শত্রু দ্বারা কৃত  ব্যাথাজনক আয়ুধ ইহাকে পীড়িত না করুক  এবং যেই গাভীর দ্বারা  ক্ষীর আদি হবি কে প্রাপ্ত করে দেবযজ্ঞ করা হয়  এবং যেই গাভিকে দক্ষিণারূপ দেওয়া হয়  সেই গাভীর সাথে এই গাভীর রক্ষাকারী যজ্ঞশীল পুরুষ নিশ্চয়রূপে চিরকাল পর্যন্ত সমবেত হয় [ সেই গাভী থেকে কখনো পৃথক না হয়]।। ৩।।

ন তা রেণুককাটোহশ্নুতে ন সংস্কৃতন্নমুপ যন্তি তা অভি।
উরুগায়মভয়ং তস্য তা অনু গাবো মর্তস্য বি চরন্তি যজ্বনঃ।।৪।।

সরলার্থঃ সেই গাভী কে  হিংসক পদাঘাত দ্বারা  ধুলিকা উদভেদক ব্যাঘ্র আদি হিংসক পশু না প্রাপ্ত হোক ,সেই গাভী  মাংসপাচক পুরুষের  না প্রাপ্ত হোক ।সেই গাভী তো সেই যজ্ঞশীল পুরুষের জন্য  বিস্তীর্ণ গমনশীল - বিশাল  ভয়রহিত দেশকে  লক্ষ্য করে বিচরন করে।।৪।।

গাবো ভগো গাব ইন্দ্রো ম ইচ্ছাদ্রাবঃ সোমস্য প্রথমস্য ভক্ষঃ।
ইমা যা গাবঃ স জনাস ইন্দ্র ইচ্ছামি হৃদা মনসা চিদিন্দ্রম্।।৫।।

সরলার্থঃ গাভীই পুরুষের ধন ও সৌভাগ্য,  অতঃ  প্রভূ আমার জন্য গাভী প্রদানের কামনা করেন, এই গো দুগ্ধই মুখ্য হবির মধ্যে শ্রেষ্ঠ  সোমের ভোজন হয়ে থাকে। হে মনুষ্য!  এই যে গাভী  তিনিই ইন্দ্র,  হৃদয় দ্বারা এবং নিশ্চয়পূর্বক মন দ্বারা সেই ইন্দ্র কে প্রার্থনাকারী হই।।৫।।

[নোটঃ (i) এই মন্ত্রে গাভীকে মনুষ্যের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পত্তি বলা হয়েছে।
(ii)  গাভীকে ইন্দ্র বলা হয়েছে।  ইন্দ্রের অর্থ রাজা।  যেমন রাজার রাজ্যে গাভী নেই,  এবং যেই রাজার রাজ্যে উত্তম দুধ, দই, ঘী মাখন আদি পদার্থ দূর্লভ বা অপ্রাপ্য তিনি বস্তুত রাজাই নয়- এখানে এরই অভিপ্রায়।  এই জন্য গাভীর রাজার রূপে এস্থলে বর্ননা করা হয়েছে। যাহা ইহা সূচিত করে রাজ্যে গাভীর অধিকতা অবশ্যই হওয়া উচিৎ।
(iii) আমি মন এবং হৃদয় দিয়ে ইন্দ্র কে প্রার্থনা করি। ইহা এটা দর্শায় যে,  এই মন্ত্রে গাভীর রাজার রূপে বর্ননা করা হয়েছে। অতঃ ইন্দ্র কে হৃদয় এবং মন দ্বারা চাওয়ার অভিপ্রায় গাভীকে হৃদয় এবং মন দ্বারা চাওয়া।
(iv) শ্রেষ্ঠ সোমের ভক্ষ্য গাভী।  ইহার অভিপ্রায় কি?  সব ঔষধির মধ্যে সোম ঔষুধ অধিক গুণসম্পন্নন। এইজন্য সোম কে শ্রেষ্ঠ বলা হয়।  যাজ্ঞিক লোক এই সোম ঔষুধির রস বের করো গাভীর দুধ বা দধিতে মিশিয়ে গ্রহন করে। ইহা দ্বারা সোম ঔষুধির রস অধিক গুণকারী হয়। ]

য়ুয়ুং গাবো মেদযথা কৃশং চিদশ্রীরং চিৎকৃণুথা সুপ্রতীকম্।
ভদ্রং গৃহং কৃণুথ ভদ্রবাচো বৃহদ্ধো বয় উচ্যতে সভাসু।।৬।।

সরলার্থঃ হে  গাভী!  তুমি  নির্বল শরীর কে  দুধ দধি দ্বারা হৃষ্ট পুষ্ট করে দাও  অশোভন অঙ্গযুক্ত  পুরুষকে  শোভন অঙ্গযুক্ত করো। হে  কল্যাণবাকযুক্ত গাভী!  আমাদের ঘর কল্যাণযুক্ত করো,  সভার মধ্যে  তোমার  দুগ্ধ দধি অন্ন অনেক প্রসংশিত।।৬।। 

[নোটঃ এই মন্ত্রে গাভীর মাংস দ্বারা মনুষ্যের স্থুলতা তথা সুরুপতার বর্ণনা নেই। বরং তার দুগ্ধাদি অন্ন খাওয়া বা পানের দ্বারা মনুষ্যের স্থুলতা তথা সুরূপতার বর্ণনা।  কারন মন্ত্রে বলা হয়েছে গাভীর অন্নের প্রসংশা রাজকীয় তথা সামাজীক সভা এবং সমিতির মধ্যে হয়ে থাকে। অতঃ খাওয়া বা যজ্ঞেের সমন্ধ্যে যেখানে যেখানে গাভীর বর্নন মেলে  সেখানে অন্ন অর্থাৎ দুধ আদির বর্ননা বোঝা উচিৎ। ]

প্রজাবতীঃ সূয়বসে রূশন্তীঃ শুদ্ধা অপঃ সুপ্রপাণো পিবন্তীঃ।
মা ব স্তেন ঈশত মাঘশংসঃ পরি বো রুদ্রস্য হেতির্বৃণক্তু।।৭।।

সরলার্থঃ হে গাভী!  উত্তম বাছুড় যুক্ত  শোভন তৃণযুক্ত দেশে শোভা দান করে উত্তম জল পান করার স্থানে নির্মল জলের পানকারী তোমাদের চোর না ছিনিয়ে নেয় এবং পাপকর্মা পুরুষ তোমাকে বশ না করে । তোমাদের রুদ্র পরমেশ্বরের বা পশুপালকের  আয়ুধ,  বজ্র সদা  সব প্রকারে রক্ষা করে।।৭।।

সুক্তের সারাংশঃ

এই গো সুক্ত পড়ে নিন্মলিখিত ভাব স্পষ্ট হয় -
(i) গাভী মনুষ্য জাতির কল্যাণ কারী তথা তাদের জীবনকে সুখময় বানায়।
(ii) গাভীর কাজ দুধ প্রদান করা মাংস প্রদান নয়।
(iii) রাজার উচিৎ এই যজ্ঞশীল, উপদেষ্টা, অধ্যাপক তথা বিদ্যার্থীর জন্য গোদান করা।
iv) এরূপ রাজনিয়ম হওয়া উচিৎ যে, রাজ্যে গাভীর না তো পাক হয় এবং না কশাইখানায় গাভী গমন করে।
(v) গাভীর বিচরনের জন্য খোলা ময়দান হওয়া উচিৎ।
(vi) গাভীকে শ্রেষ্ঠ এবং মুখ্য সম্পত্তি জানা উচিৎ।
(vii) যেই রাজ্যে গাভী নেই সেই রাজ্যে মূলত রাজাই নেই।
(viii) শারীরিক পুষ্টি তথা শারীরিক কান্তির জন্য গোদুগ্ধ উত্তম পদার্থ।
(ix) জল পানের জন্য ওইরূপ জলাশয় হওয়া উচিৎ যেখানের জল শুদ্ধ এবং গাভী সুখপূর্বক জল পান করতে পারে।
(x) এবং  ক্রুর মনুষ্য যেন গাভীর উপর শস্ত্র পাত করতে না পারে।

এই গোসুক্ত পড়ে কি গোমেধের পৌরানিক ভাব সত্য প্রমাণ হতে পারে?